দৈনন্দিন জীবনে হাঁটার গুরুত্ব সম্পর্কে যদিও কম বেশি অনেকেই জানে। তবে তা সত্ত্বেও কিছুটা আলসেমি এবং কষ্টের ভয়ে কিংবা কাজের ব্যস্ততার অজুহাতে অনেকেই হাঁটাহাঁটি এড়িয়ে চলতে চান। কিন্তু হাঁটা হলো সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম। ছোট-বড় যে কেউ নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনি হাঁটার জন্য যখন সময় বের করতে পারবেন, তখনই হাঁটবেন। তবে হাঁটার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় বিকেল। যারা সকালে হাঁটতে যান, তাদের জন্য পরামর্শ, ঘুম থেকে উঠেই হাঁটতে যাওয়া ঠিক না। ঘুম থেকে ওঠার কমপক্ষে ৩০ মিনিট পর হাঁটতে বের হওয়া উচিত।
সকল দৈহিক ও মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিজের জন্য কমপক্ষে ৩০ মিনিট সময় বের করার চেষ্টা করুন। যেখানেই হোক না কেন এই ৩০ মিনিট সময় নিয়ে আপনি হাঁটুন। বাইরে যাওয়া সম্ভব না হলে আপনার ছাদে বা বাগানেও হাটতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই হাঁটার উপকারিতা গুলো।
হাঁটার উপকারিতা:
- শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমে। ভালো কোলেস্টেরল বাড়ে, মন্দ কোলেস্টেরল কমে।
- ওজন কমে। ওজন নিয়ন্ত্রণে হাঁটার কোন বিকল্প নেই। যার ওজন ৬০ কেজি তিনি যদি প্রতিদিন ঘণ্টায় ২ মাইলগতিতে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করেন, তাহলে ৭৫ ক্যালরি ক্ষয় হবে। আর যদি ঘণ্টায় ৩ মাইল গতিতে হাঁটেন তবে ক্ষয় হবে ৯৯ ক্যালরি। এভাবে ক্যালোরি ক্ষয় করে দেহের ওজন কমানো যায়।
- নিয়মিত হাঁটায় কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায় ও কাজের প্রতি অনিহা থাকে না। তাছাড়াও শরীরের ভিতর বিভিন্ন সমস্যা যেমন, ঝিমঝিম ভাব, বাত ব্যাথা ইত্যাদি প্রতিদিন হাঁটার ফলে কমে যায়। মন-মেজাজ ঝরঝরে এবং ভালো রাখতে হাঁটার উপরে ভালো কোন ঔষধ নাই।
- আপনি যখন কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করছেন তখন হতাশ হয়ে এক জায়গায় বসে না থেকে একটু হাঁটাহাঁটি করলে সেটা তাড়াতাড়ি সমাধান হয়। হাঁটা আমাদের সৃজনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি করে সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
- সাধারণত ৩০ বছর বয়সের পর শরীরের চামড়া ঢিলা হতে থাকে। নিয়মিত হাঁটলে এ সমস্যার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। যারা আগে থেকেই নিয়মিত হাঁটে, তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে শরীরের চামড়া অনেক বয়স পর্যন্তও টান টান থাকে। যারা নিয়মিত হাঁটেন তারা ৭০ বছর বয়সেও বেশ শক্ত সবল থাকেন।
- হাঁটার ফলে রাতের ঘুম ভালো হয়, হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় ও ক্ষুধা বাড়ে।
- হাঁটুব্যথা, কোমরব্যথা কমে। দিনে নিয়ম করে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে পরে আর পেইনকিলার খেতে হয় না।
- হাঁটলে শরীরের পেশিতে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে রক্তের গ্লুকোজ কমে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (স্ট্রোক) ঝুঁকি কমাতেও প্রতিদিন হাঁটুন। করোনারি ধমনিতে ব্লক থাকলেও নিয়মিত হাঁটার কারণে আশপাশের ছোট রক্তনালিতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে। ফলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে।
- মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমে। হাঁটার সময় হৃৎস্পন্দন আর শ্বাস–প্রশ্বাসের গতি বাড়ে। ফলে হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুসে রক্ত সরবরাহ বাড়ে।
- যারা নিয়মিত হাঁটেন, তাঁদের হাড়ের ক্ষয়জনিত রোগ কম হয়। হাড়ের জোড়া বা গিঁট সুস্থ থাকে।
কিছু টিপস্ :
- হাঁটার উপকার পেতে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ও কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে হাঁটুন।
- বাসায় কিংবা অফিসে লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করতে পারেন।
- হাঁটা শুরু করার প্রথম দিকে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে হাত–পা নেড়ে ওয়ার্মআপ করে নিন ৫ মিনিট।
- প্রথমে ধীরে হাঁটা শুরু করুন। তারপর গতি বাড়ান। শেষ ৫ মিনিট আবার গতি ধীর করুন। একে কুলডাউন বলে। তারপর এক জায়গায় বসে খানিক বিশ্রাম নিয়ে ফিরে আসুন।
- হাঁটবার সময় দেহ সোজা করে হাঁটবেন, কুজো বা বাঁকা হয়ে হাঁটবেন না।
- হাঁটা শুরু করবার আগে অন্তত দুই (২) গ্লাস পানি পান করে নিবেন।
- হাঁটার জন্য পাতলা স্যান্ডেল বা জুতা হলে ভালো হয়। ভারী কোনো কিছু পরে বেশি হাঁটলে পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।
- অফিস থেকে বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরবার সময় বাস থেকে আগের স্টপেজেই নেমে পড়ুন, এতে করে স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশিই হাঁটা হবে।
***আপনার যদি কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর হাঁটবেন।