Uncategorized

নবজাতকের শীতকালীন যত্ন

নবজাতকের শীতকালীন যত্নে  দরকার বাড়তি  সতর্কতা:

 

যারা প্রথমবার মা হয়েছে এরকম নতুন মায়েদের সহ সব মায়েরাই ছোট শিশুদের বা নবজাতকের শীতকালীন যত্ন সম্পর্কে খুবই চিন্তার মধ্যে থাকেন কারণ বাচ্চাদের অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায় এবং তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের মতো না হওয়া সহজেই তারা রোগাক্রান্ত হয় । এজন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন শীতকালে।

 

  • শীতকালে বাচ্চাকে আরামদায়ক গরম পোশাক পরিয়ে রাখতে হবে যদি হালকা ঠান্ডা থাকে সেক্ষেত্রে বেশি ভারী জামাকাপড় দিয়ে বাচ্চাকে মুড়ে রাখা যাবেনা বা লেপ-কাঁথা দিয়ে বাচ্চাকে শোয়ানো যাবে না বিশেষ করে নবজাতকের গায়ে ভারী কম্বল দেয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে স্লিপিং স্যাক বা কাঁথা ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

  • সরাসরি বাচ্চাকে ফ্যানের নিচে শোয়ানো যাবে না , এছাড়া ঘরের দরজা জানলা ভোরের দিকে খোলা রাখা যাবে না । তাতে ঠান্ডা বাতাস ঢুকতে পারে। যখন রোদ উঠবে তখন দরজা-জানলা খুলে দিয়ে আলো বাতাস যাতে প্রবেশ করতে পারে ঘরে সেই ব্যবস্থা করতে হবে । নাতিশীতোষ্ণ একটি ঘরে বাচ্চাকে রাখতে হবে যেহেতু বাচ্চা মায়ের গর্ভে একটা নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে থাকে সেজন্য বাহিরের স্বাভাবিক তাপমাত্রাও তার জন্য কঠিন হতে পারে।

 

  • শিশুকে কিছুক্ষণ রোদে মেলে ধরুন। রোদ থেকে শরীর ভিটামিন ডি গ্রহণ করবে। সূর্য শীতের প্রভাব কমাবে এবং শিশুকে আরো সক্রিয় ও প্রাণবন্ত করে তুলবে। এ সময় সতেজ বাতাসও গ্রহণ করতে সক্ষম হবে শিশু। সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে থাকলে মা ও তার শিশু উভয়ই বিষণ্ণ ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

 

  • বাচ্চার হালকা সর্দি কাশি থেকে যাতে নিউমোনিয়া না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । নিউমোনিয়ার লক্ষণের মধ্যে – তীব্র জ্বর ,শ্বাসকষ্ট ,শ্বাস নেবার সময় বাচ্চার বুকের খাচা ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া এবং বাচ্চা ঘনঘন শ্বাস নিলে নীল হয়ে যাওয়া – এই ধরনের কোন উপসর্গ দেখা দিলে বাচ্চাকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

 

  • নবজাতকের ক্ষেত্রে এসময় মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট, যা তাকে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে। শীতকালে নবজাতককে গরম পানি বা মধু খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। নবজাতকের জন্য ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধই যথেষ্ট।

 

  • নবজাতকের ত্বক খুব সংবেদনশীল থাকে। সে ক্ষেত্রে ত্বকের যত্নে শীতকালে ভালো মানের বেবি অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। নারিকেল তেল বা সরিষার তেল নবজাতকের গায়ে ব্যবহার না করাই ভালো হবে।

 

  • শীত খুব বেশি না হলে হালকা সুতি কাপড় পরিয়ে কাঁথা মুড়িয়ে রাখা যায় , ভারী কাপড় না পরিয়ে । কারণ এতে শিশুর শরীর ও মাথা ঘেমে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। এসময় বাচ্চার নাভিতে যে কোন তেল না লাগানোই ভালো হবে, কারণ এতে সংক্রমণ হতে পারে।

 

  • শীতকালে বারবার বাচ্চা প্রস্রাব করলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাই কাপড়ের ন্যাপি ব্যবহার না করে ডায়পার ব্যবহার করা যায় ,যা চার থেকে ছয় ঘন্টা পর পর বদলে দিতে হবে এবং ডায়পার থেকে যাতে র‍্যাশ না হয়ে যায় সেজন্য ভেসলিন বা র‍্যাশ ক্রিম ব্যবহার করা যাবে।

 

  •  শিশুর বিছানা-বালিশ প্রতিদিন রোদে গরম করে নিলে শিশু আরামবোধ করবে।জন্মের ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত নবজাতককে গোসল করানো যাবে না। এর মধ্যে শিশুর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণক্ষমতা গড়ে উঠবে। 

 

  • প্রতিদিনই নবজাতকের শরীর ম্যাসাজ করতে হবে। ম্যাসাজ শরীরের রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে মজবুত করে। বাচ্চার গোসলের আগে এক বা দুই ঘণ্টা ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজে নারকেল তেল, বাদাম তেল এবং জলপাই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে ৷

 

  • বাচ্চার গোসলের জন্য শীতকালে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে । বাচ্চাকে গোসল করানোর আগে হাত দিয়ে অবশ্যই পানির তাপমাত্রা দেখে নিতে হবে । খুব বেশি শীত থাকলে প্রতিদিন বাচ্চাকে গোসল না করালেও চলবে। কুসুম গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে বাচ্চার গা মুছিয়ে দিলেও হবে । শুকনো নরম কাপড় দিয়ে মাথা মুছে দিতে হবে ৷ মাথা ভেজা থাকলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে ৷

 

  • ঠাণ্ডা তীব্র হলে শিশুর ঘরে আর্দ্রতা পরিবাহক যন্ত্র  (হিউমিডিফায়ার) ব্যবহার করতে পারেন। এতে ঘরে আর্দ্রতা বজায় থাকবে। কেননা শীতে বাতাসে জলীয় বাষ্প কমে যায়। এতে শিশুর ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক।

 

আপনার নবজাতকের এসব নিয়মকানুন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সবসময় সচেতন থাকুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *