Uncategorized

গর্ভকালিন সতর্কতা

প্রেগনেন্সি একজন নারীর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এসময় প্রয়োজন বাড়তি যত্ন এবং সাবধানতা। এই সময়ের সামান্য অজ্ঞতা সন্তান এবং মা উভয়ের জন্যই হতে পারে মারাত্নক ঝুঁকির কারণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় কিছু সতর্কতা ।

১। নারীর গর্ভকালীন সময়ে প্রথম দু-তিন মাস ও শেষের তিন মাস অতিরিক্ত পরিশ্রম না করে হালকা হাঁটাচলা করা উচিত। ভারী জিনিস বহন করা বা তোলা যাবে না। পিচ্ছিল স্থানে হাঁটা যাবে না এবং সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সেই সাথে এমন খাবার খাবেন না যা বাচ্চার জন্য খারাপ হবে। পেঁপে, আনারসের সাথে সাথে কাঁচা বা আধা সিদ্ধ প্রোটিন যেমন মাছ, মাংস, ডিম এসব পরিহার করে চলতে হবে। প্রোটিন ভালো করে রান্না করে তবেই খাবেন। সেই সাথে গলিত চিজ বা এই জাতীয় খাবার  পরিহার করে চলবেন।

২। এ সময় নিয়মিত প্রতিদিন সাবান দিয়ে ভালোভাবে গোসল করতে হবে এবং হাত-পায়ের নখ কেটে ছোট রাখতে হবে। গর্ভকালে মায়েদের দাঁতগুলো বেশ নরম হয়ে যায়, তাই দাঁত ও মাড়ির বিশেষ যত্ন নিতে হবে। চার থেকে আট মাসের মধ্যে অবশ্যই টিটেনাসের টিকা দিতে হবে। এ সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে। তাই ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, চিকেন পক্স ইত্যাদি ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত রোগী থেকে দূরে থাকতে হবে।

 

৩। স্বাভাবিক শারীরিক অবস্থায় যে ঔষধ আমরা গ্রহণ করি, প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে সেই একই ওষুধ গর্ভস্থ শিশুর জন্য হুমকি স্বরুপ হতে পারে। যদি এমন কোনো ওষুধ থাকে যা আপনি নিয়মিতভাবে দীর্ঘদিন খেয়ে আসছেন, তাহলে এ বিষয়ে আপনার চিকিৎসককে অবহিত করুন। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক কোন ওষুধ খাবার থাকলে তা খাবেন। এমনকি গ্যাসের সমস্যা বা মাথা ব্যাথা বা জ্বর হলেও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খেতে যাবেন না। এতে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। সুতরাং এই সময়ে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া যে কোনো ধরনের ওষুধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।

৪।  প্রেগনেন্সির প্রথম থেকেই ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। পাশাপাশি ফলিক এসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন। পর্যাপ্ত ফলিক এসিডের অভাবে গর্ভস্থ শিশুর ব্রেইন এবং স্পাইনাল কর্ডের ডিফেক্ট হতে পারে।

৫। ডাক্তার নির্বাচন করার আগে মনে রাখবেন ডাক্তারের সাথে যে কোন সময় যোগাযোগ করা সম্ভব কি না, যে কোন দরকারে তাকে পাওয়া যাবে কি না। সেই সাথে দূরত্বটাও খেয়াল রাখবেন। যেহেতু আপনি অন্তঃসত্ত্বা তাই এ সময় বেশি চলাচল করতে পারবেন না। কেননা তা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই ডাক্তারের কাছে অল্প সময়ে যেন পৌঁছানো যায় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।

৬। প্রথম ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত মাসে কমপক্ষে ১ বার, ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ২ সপ্তাহ পরপর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। তবে যদি আপনার কোনো শারীরিক জটিলতা থেকে থাকে তবে আপনার এন্টিন্যাটাল ভিজিট এর সংখ্যা বেশি হতে পারে। আপনার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা সাপেক্ষে আপনার ডাক্তার আপনার ভিজিট এর সংখ্যা নির্ধারন করবেন।

৭। এলকোহল, ক্যাফেইন, ধুমপান থেকে দূরে থাকুন, তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেমনই হোক না কেন। কারন এই সময় এসব জিনিস অন্য যে কোন কিছুর থেকেই সবচাইতে বেশি ক্ষতি করে বাচ্চার।

৮। ঘুমের সময় বাড়িয়ে দিন। দিনে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা করে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। এছাড়াও সারাদিনের কাজের ফাঁকে ফাঁকে হালকা বিশ্রাম নিতে পারেন।

৯। গর্ভবতী মায়েদের অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আরামদায়ক, সহজে পরিধানযোগ্য ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত। সঠিক মাপের এবং নরম জুতো পরতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই হিল পরিহার করা উচিত।

 

১০। প্রেগনেন্সির সময় পেটের এক্সরে শিশুর birth defect কারণ হতে পারে। যদি কোনো ইমার্জেন্সি কারণে X-Ray করতে বলা হয়, সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারকে প্রেগনেন্সির ব্যাপারে জানান। পূর্বে কোনো এবরশন করিয়ে থাকলে তা অবশ্যই ডাক্তারকে জানান। এর আগে কোনো মৃত শিশু জন্ম দিলে বা জন্মের পর কোনো শিশুর মৃত্যু ঘটলে সেই বিষয়টিও অবগত করুন।

১১। শিশুর নড়া চড়া বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা কমে গেলে, ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষার ঝুঁকি নেবেন না। দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। ১৮ থেকে ২২ সপ্তাহের মধ্যে একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে পারেন, যেটাকে anomaly scan বলে। এর মাধ্যমে শিশুর বেশিরভাগ জন্মগত ত্রুটি নির্ণয় করা সম্ভব।

১২। অন্তঃসত্ত্বা হবার কারনে শরীরে বেশ কিছু হরমোন পরিবর্তন ঘটে। যার ফলে বমি ভাব, মাথা ঘোরা, খেতে না পারা, শরীর খারাপ ভাব হতে পারে। তবে সবাইকে যে এই সকল পরিস্থিতি পার করতে হয় তাও নয়, অনেক মায়ের মধ্যেই এসবের কোনটি বা কখনও কখনও একটিও উপসর্গ দেখা যায় না। এমন কিছু হলে ভয় পাবেন না, আবার না হলেও ভয় পাবেন না। বেশি বমি হলে সকালে উঠে লেবু পানি খেতে পারেন। আর মাথা বেশি ঘোরালে শুয়ে পড়ুন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে।

১৩। সন্তান গর্ভে ধারণ করার ফলে কিছু শারীরিক পরিবর্তনও ঘটে। যেহেতু সন্তান জরায়ুতে ধারণ করা হয় ও জরায়ুর অবস্থান থাকে প্রসাবের নালীর উপরে, তাই বাচ্চার বৃদ্ধির সাথে সাথে জরায়ু প্রসাবের নালির উপরে কিছু চাপ ফেলে। ফলে প্রসাবের পরিমান বেড়ে যাবে। এই সমস্যা প্রথম ৩ মাস এবং শেষ ৩ মাসের মধ্যেই প্রবল থাকে বেশি।

১৪। এছাড়াও অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারীরই রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারো রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, আবার কারো বা কমে যেতে পারে। সেই সাথে দেখা দিতে পারে সুগারের সমস্যা। তাই সন্তানের গর্ভধারণের পরপর ডাক্তারের পরামর্শে সব কিছুর পরীক্ষা একবার করে নিয়ে দেখতে হবে গর্ভাবস্থা স্বাভাবিক আছে কি না। এমন কোনও সমস্যা দেখা দিলে নিয়মিত চেকআপের মধ্যে থাকতে হবে।

১৫। বুক জ্বালা করা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে অনেক মায়ের। অন্তঃসত্ত্বা নারীর খাবার হজম হতে ও পেট খালি হতে অন্য নারীদের তুলনায় বেশি সময় লাগে, কারন গর্ভস্থ বাচ্চার খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহন করতে সময় লাগে একটু বেশি। কিন্তু এই কারণটাই গর্ভবতী নারীর জন্য হয়ে যায় কষ্টের কারণ। এর ফলেই গর্ভবতী নারী শিকার হতে পারেন কোষ্ঠকাঠিন্য ও বুক জ্বালা করা রোগের। ঘাবড়ে যাবেন না। দরকার পড়লে ডাক্তারের পরামর্শে কোন ওষুধ সেবন করতে পারেন।

১৬। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস দীর্ঘ ভ্রমণে না যাওয়াই ভালো। উঁচু-নিচু পথ কিংবা ঝাঁকির আশঙ্কা আছে এমন যানবাহনে ভ্রমণ করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। সকালে ও বিকেলে কিছু সময়ের জন্য স্বাস্থ্যকর ও মনোরম পরিবেশে ভ্রমণ গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো, এতে শরীর সুস্থ ও মন প্রফুল্ল থাকে। তাই ফুলের বাগান, লেকের পাড়, পার্ক- এসব স্থানে ভ্রমণ করা উচিত।

 

বিশেষ সতর্কতা

 

অতিরিক্ত আবেগ, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ভয়, রোগ-শোক ইত্যাদি গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, তাই এসব এড়িয়ে ভালো চিন্তা করতে হবে। প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস স্বামীর সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা যাবে না। পানিশূন্যতা রোধে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সব ধরনের ঝুঁকি এড়াতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক।  

 

তথ্যের উৎস

https://www.shajgoj.com/pregnancy-period-9-cautions/

https://www.manobkantha.com.bd/health/384070/%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B0-%E0%A7%A9-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%AF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A8

https://bangla.thedailystar.net/anandadhara/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0/%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AD%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A7%80-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%80%E0%A7%9F-80452

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *